দক্ষিণ এশিয়ায় শেখ হাসিনার আগেও সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছিল। তাদের মধ্যে রায় কার্যকর হয় একজনের। আর পশ্চিম এশিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের আলোচিত ঘটনাটি ইরাকের।
শেখ হাসিনার আগে উপ-মহাদেশে যে দুই সাবেক শাসকের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল তারা দুজনই পাকিস্তানের- জুলফিকার আলী ভুট্টো ও পারভেজ মোশাররফ। দুটি রায় ঘোষণা হয়েছিল রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায়। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী (১৯৭৩-৭৭) ও পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রতিষ্ঠাতা জুলফিকার আলী ভুট্টো ক্ষমতাচ্যুত হন ১৯৭৭ সালে। তাঁকে উৎখাত করে তখন সামরিক শাসন জারি করেন সেনাপ্রধান জিয়াউল হক। এর দুই বছর পর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যার নেপথ্যে থাকার দায়ে ভুট্টোর মৃত্যুদণ্ড দেন সুপ্রিম কোর্ট।
১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল রাওয়ালপিন্ডির একটি কারাগারে ভুট্টোর ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। সে সময়কার শাসক জিয়াউল হক ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত। একই বছরের আগস্টে বিমান দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান।
ভুট্টোর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ৪৪ বছর পর গত বছরের মার্চে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট জানান, হত্যা মামলায় ভুট্টোর ন্যায়সঙ্গত বিচার হয়নি। তখন দেশটির প্রধান বিচারপতি কাজী ফায়েজ ঈসা বলেছিলেন, ‘আমরা দেখেছি ন্যায্য বিচার ও যথাযথ প্রক্রিয়ার শর্তগুলো পূরণ করা হয়নি।’ ভুট্টো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন ১৯৭১-৭৩ সাল পর্যন্ত। পাকিস্তান আরেক সাবেক প্রেসিডেন্টের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের সাক্ষী হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। ২০০৭ সালে সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারির অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় এই রায় ঘোষণা হয়েছিল। আসামি ছিলেন সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফ।
মোশাররফ ১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সংবিধান স্থগিতের ঘটনায় পাকিস্তানের ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হলে অভিশংসন এড়াতে ২০০৮ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। ২০১৬ সালে তিনি চিকিৎসার জন্য দুবাই যান। ২০১৯ সালে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার সময়ও তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছিলেন। অসুস্থতাজনিত কারণে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি মারা যান।
ঈদের দিন সাদ্দামের ফাঁসি
২০০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ছিল ঈদুল আজহার দিন। সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের।
যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের হাতে ক্ষমতাচ্যুতি ও গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ১৯৭৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ইরাক শাসন করেন সাদ্দাম। শাসনামলে গণহত্যার অভিযোগে তাঁকে অভিযুক্ত করে ইরাকের আদালত। এর মধ্যে ছিল ১৯৮২ সালে দুজাইল শহরে শিয়া জনগোষ্ঠী হত্যাকাণ্ড এবং ১৯৮৮ সালের হালাবজা গণহত্যা। বিদ্রোহী কুর্দি অধ্যুষিত শহর হালাবজায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগও ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা হয়। যা নাইন-ইলেভেন নামে পরিচিত। এ ঘটনার পর সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের রাসায়নিক ও অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগ তোলে যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৩ সালের মার্চে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ সাদ্দাম হোসেনকে পদত্যাগ করে ইরাক ছাড়ার আল্টিমেটাম দেন। ২০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা ইরাকে হামলা করে। ২০০৪ সালের জুনে মার্কিন সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হন সাদ্দাম। ২০০৫ সালের অক্টোবরে বিচার শুরুর পর রায় ঘোষণা হয় ২০০৬ সালের নভেম্বরে। এর কয়েকদিনের মাথায় তা কার্যকর হয়।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন ও ব্রিটানিকা
খুলনা গেজেট/এএজে

